আল হিজর

সুরার ভূমিকা
দেখতে ক্লিক করুন

X close

নামকরণ

৮০ আয়াত وَلَـقَدۡ كَذَّبَ اَصۡحٰبُ الۡحِجۡرِ الۡمُرۡسَلِيۡنَۙ‏ এর আল হিজর শব্দটি থেকে সূরার নাম গৃহীত হয়েছে।

নাযিল হওয়ার সময়-কাল

বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভঙ্গী থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, এ সূরাটি সূরা ইবরাহীমের সমসময়ে নাযিল হয়। এ পটভূমিতে দু’টি জিনিস পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। এক, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতের একটি দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। যে জাতিকে তিনি দাওয়াত দিচ্ছেন তাদের অবিরাম হঠকারিতা, বিদ্রূপ, বিরোধিতা, সংঘাত ও জুলুম-নিপীড়ন সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এরপর বুঝাবার সুযোগ কমে এসেছে এবং তার পরিবর্তে সতর্ক করা ও ভয় দেখাবার পরিবেশই বেশী সৃষ্টি হয়েছে। দুই, নিজের জাতির কুফরী, স্থবিরতা ও বিরোধিতার পাহাড় ভাংতে ভাংতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। মানসিক দিক দিয়ে তিনি বারবার হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছেন। তা দেখে আল্লাহ তাঁকে সান্তনা দিচ্ছেন এবং তাঁর মনে সাহস যোগাচ্ছেন।

বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য বিষয়

এই দু’টি বিষয়বস্তুই এ সূরায় আলোচিত হয়েছে। অর্থাৎ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত যারা অস্বীকার করছিল, যারা তাঁকে বিদ্রূপ করছিল এবং তাঁর কাজে নানা প্রকার বাধার সৃষ্টি করে চলছিল, তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছে। আর খোদ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সান্তনা ও সাহস যোগানো হয়েছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, বুঝাবার ও উপদেশ দেবার ভাবধারা নেই। কুরআনে আল্লাহ শুধুমাত্র সতর্কবাণী উচ্চারণ বা নির্ভেজাল ভীতি প্রদর্শনের পথ অবলম্বন করেননি। কঠোরতম হুমকি ও ভীতি প্রদর্শন এবং তিরস্কার ও নিন্দাবাদের মধ্যেও তিনি বুঝাবার ও নসীহত করার ক্ষেত্রে কোন কমতি রাখেননি। এজন্যই এ সূরায়ও একদিকে তাওহীদের যুক্তি-প্রমাণের প্রতি সংক্ষেপে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং অন্যদিকে আদম ও ইবলীসের কাহিনী শুনিয়ে উপদেশ দানের কার্যও সমাধা করা হয়েছে।
وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَـٰيِشَ وَمَن لَّسْتُمْ لَهُۥ بِرَٰزِقِينَ
২০) এবং তার মধ্যে জীবিকার উপকরণাদি সরবরাহ করেছি তোমাদের জন্যও এবং এমন বহু সৃষ্টির জন্যও যাদের আহারদাতা তোমরা নও।
)
وَإِن مِّن شَىْءٍ إِلَّا عِندَنَا خَزَآئِنُهُۥ وَمَا نُنَزِّلُهُۥٓ إِلَّا بِقَدَرٍۢ مَّعْلُومٍۢ
২১) এমন কোন জিনিস নেই যার ভাণ্ডার আমার কাছে নেই এবং আমি যে জিনিসই অবতীর্ণ করি একটি নির্ধারিত পরিমাণেই করে থাকি।১৪
১৪) এখানে এ সত্যটি সম্পর্কে সজাগ করে দেয়া হয়েছে যে, সীমিত ও পরিকল্পিত প্রবৃদ্ধির এই নিয়ম কেবল উদ্ভিদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয় বরং যাবতীয় সৃষ্টির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। বায়ূ, পানি, আলো, শীত, গ্রীষ্ম, জীব, জড়, উদ্ভিদ তথা প্রত্যেকটি জিনিস, প্রত্যেকটি প্রজাতি, প্রত্যেকটি শ্রেণী ও প্রত্যেকটি শক্তির জন্য একটি সীমা নির্ধারিত রয়েছে। তার মধ্যে তারা অবস্থান করছে। তাদের জন্য একটি পরিমাণও নির্ধারিত রয়েছে, তার চাইতে তারা কখনো বাড়েও না আবার কমেও না। এই নির্ধারিত অবস্থা এবং পরিপূর্ণ প্রজ্ঞামূলক নির্ধারিত অবস্থার বদৌলতেই পৃথিবী থেকে আকাশ পর্যন্ত সমগ্র বিশ্বব্যবস্থায় এই ভারসাম্য, সমন্বয় ও পারিপাট্য দেখা যাচ্ছে। এই বিশ্বজাহানটি যদি একটি আকস্মিক ঘটনার ফসল হতো অথবা বহু খোদার কর্মকুশলতা ও কর্মতৎপরতার ফল হতো, তাহলে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের অসংখ্য বস্তু ও শক্তির মধ্যে এই পর্যায়ের পূর্ণ ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া ও অব্যাহতভাবে প্রতিষ্ঠিত থাকা কেমন করে সম্ভব হতো?
وَأَرْسَلْنَا ٱلرِّيَـٰحَ لَوَٰقِحَ فَأَنزَلْنَا مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَأَسْقَيْنَـٰكُمُوهُ وَمَآ أَنتُمْ لَهُۥ بِخَـٰزِنِينَ
২২) বৃষ্টিবাহী বায়ূ আমিই পাঠাই। তারপর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করি এবং এ পানি দিয়ে তোমাদের পিপাসা মিটাই। এ সম্পদের ভাণ্ডার তোমাদের হাতে নেই।
)
وَإِنَّا لَنَحْنُ نُحْىِۦ وَنُمِيتُ وَنَحْنُ ٱلْوَٰرِثُونَ
২৩) জীবন ও মৃত্যু আমিই দান করি এবং আমিই হবো সবার উত্তরাধিকারী।১৫
১৫) অর্থাৎ তোমাদের ধ্বংসের পরে একমাত্র আমিই টিকে থাকবো। তোমরা যা কিছু্‌ পেয়েছো, ওগুলো নিছক সাময়িকভাবে ব্যবহার করার জন্য পেয়েছো। শেষ পর্যন্ত আমার দেয়া সব জিনিস ত্যাগ করে তোমরা এখান থেকে বিদায় নেবে একেবারে খালি হাতে এবং এসব জিনিস যেমনটি ছিল ঠিক তেমনটি আমার ভাণ্ডারে থেকে যাবে।
وَلَقَدْ عَلِمْنَا ٱلْمُسْتَقْدِمِينَ مِنكُمْ وَلَقَدْ عَلِمْنَا ٱلْمُسْتَـْٔخِرِينَ
২৪) তোমাদের পূর্বে যারা গত হয়েছে তাদেরকে আমি দেখে রেখেছি এবং পরবর্তী আগমনকারীরাও আমার দৃষ্টি সমক্ষে আছে।
)