আল আনকাবূত

সুরার ভূমিকা
দেখতে ক্লিক করুন

X close

নামকরণঃ

একচল্লিশের আয়াতের অংশবিশেষ مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنْكَبُوتِ থেকে সূরাটির নামকরণ করা হয়েছে। অর্থাৎ যে সূরার মধ্যে 'আনকাবুত' শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, এটি সে সূরা।

নাযিল হবার সময়কালঃ

৫৬ থেকে ৬০ আয়াতের মধ্যে যে বক্তব্য এসেছে তা থেকে সুস্পষ্টভাবে জানা যায় যে, এ সূরাটি হাবশায় হিজরতের কিছু আগে নাযিল হয়েছিল। অধিকন্তু বিষয়বস্তু গুলোর অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যও একথাই সমর্থন করে। কারণ, পশ্চাতপটে সে যুগের অবস্থার চিত্র ঝলকে উঠতে দেখা যায়। যেহেতু এর মধ্যে মুনাফিকদের আলোচনা এসেছে এবং মুনাফিকীর প্রথম দশটি আয়াত হচ্ছে মাদানী এবং বাকি সমস্ত সূরাটি মক্কী। অথচ এখানে যেসব লোকের মুনাফিকীর কথা বলা হয়েছে তারা কেবল কাফেরদের জুলুম, নির্যাতন ও কঠোর শারীরিক নিপীড়নের ভয়ে মুনাফিকী অবলম্বন করছিল। আর একথা সুস্পষ্ট, এ ধরনের মুনাফিকীর ঘটনা মক্কায় ঘটতে পারে, মদীনায় নয়। এভাবে এ সূরায় মুসলমানদেরকে হিজরত করার উপদেশ দেয়া হয়েছে, এ বিষয়টি দেখেও কোন কোন মুফাসসির একে মক্কায় নাযিলকৃত শেষ সূরা গণ্য করেছেন।। অথচ মদীনায় হিজরতের আগে মুসলমানগণ হাবশায়ও হিজরত করেছিলেন। এ ধারণাগুলো আসলে কোন হাদীসের ভিত্তিতে নয়। বরং শুধুমাত্র বিষয়বস্তুর অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে। আর সমগ্র সূরার বিষয়বস্তুর ওপর সামগ্রিকভাবে দৃষ্টিপাত করলে এ অভ্যন্তরীণ সাক্ষ্য মক্কার শেষ যুগের নয় বরং এমন এক যুগের অবস্থার প্রতি অঙ্গুলি নির্দেশ করে যে যুগে মুসলমানদের হাবশায় হিজরত সংঘটিত হয়েছিল।

বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় বক্তব্যঃ

সূরাটি পড়লে মনে হবে এটি যখন নাযিল হচ্ছিল তখন মক্কায় মুসলমানরা মহা বিপদ-মুসিবতের মধ্যে অবস্থান করছিল। কাফেরদের পক্ষ থেকে পূর্ণ শক্তিতে চলছিল ইসলামের বিরোধিতা এবং মু’মিনদের ওপর চালানো হচ্ছিল কঠোর জুলুম-নিপীড়ন। এহেন অবস্থায় মহান আল্লাহ একদিকে সাচ্চা ঈমানদারদের লজ্জা দেবার জন্য এ সূরাটি নাযিল করেন। এই সাথে এর মধ্যে মক্কায় কাফেরদেরকেও এ মর্মে কঠোর ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে যে, নিজেদের জন্য এমন পরিণতি ডেকে এনো না সত্যের সাথে শত্রুতা পোষণকারীরা প্রতি যুগে যার সম্মুখীন হয়ে এসেছে।

সে সময় কিছু কিছু যুবক যেসব প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছিলেন এ প্রসঙ্গে তারও জবাব দেয়া হয়েছে। যেমন তাদের পিতা-মাতারা তাদের ওপর মুহাম্মদ (সা.) এর দ্বীন ত্যাগ করে তাদের দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করতো। তাদের পিতা-মাতারা বলতো, যে কুরআনের প্রতি তোমরা ঈমান এনেছো তাতেও তো লেখা আছে যে, মা-বাপের হক সবচেয়ে বেশি। কাজেই আমরা যা কিছু বলছি তাই তোমরা মেনে নাও। নয়তো তোমরা নিজেদের ঈমান বিরোধী কাজে লিপ্ত হবে। ৮ আয়াতে এর জবাব দেয়া হয়েছে।

অনুরূপভাবে কোন কোন নওমুসলিমকে তাদের গোত্রের লোকেরা বলতো, তোমরা আমাদের কথা মেনে নাও এবং ঐ ব্যক্তি থেকে আলাদা হয়ে যাও, এ জন্য আযাব-সওয়াব যাই হোক, তার দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করছি। যদি এ জন্য আল্লাহ তোমাদের পাকড়াও করেন তাহলে আমরা অগ্রবর্তী হয়ে বলে দেবোঃ জনাব, এ বেচারাদের কোন দোষ নেই। আমরাই এদেরকে ঈমান ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিলাম। কাজেই আমাদের পাকড়াও করুন। এর জবাব দেয়া হয়েছে ১২-১৩ আয়াতে।

এ সূরায় যে কাহিনীগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেখানেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ দিকটিই সুস্পষ্ট করা হয়েছে যে, পূর্ববর্তী নবীদেরকে দেখো, তারা কেমন কঠিন বিপদের সম্মুখীন হয়েছেন। কত দীর্ঘকাল ধরে তারা নির্যাতিত হয়েছেন। তারপর আল্লাহর পক্ষ থেকে তাদের সাহায্য করা হয়েছে। কাজেই ভয় পেয়ো না। আল্লাহর সাহায্য নিশ্চয়ই আসবে কিন্তু পরীক্ষার একটি সময়কাল অতিবাহিত হওয়া অবশ্যই প্রয়োজন। মুসলমানদেরকে এ শিক্ষা দেবার সাথে সাথে মক্কার কাফেরদেরকেও এ কাহিনীগুলোতে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, যদি আল্লাহর পক্ষ থেকে পাকড়াও হতে দেরি হয়, তাহলে তাতে আর কোনদিন পাকড়াও হবেই না বলে মনে করে নিয়ো না। অতীতের ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর চিহ্ন ও ধ্বংসাবশেষ তোমাদের সামনে রয়েছে। দেখে নাও, শেষ পর্যন্ত তাদের সর্বনাশ হয়েই গেছে এবং আল্লাহ তার নবীদেরকে সাহায্য করেছেন।

তারপর মুসলমানদেরকে এভাবে পথনির্দেশনা দেয়া হয়েছে যে, জুলুম নির্যাতন যদি তোমাদের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ঈমান পরিত্যাগ করার পরিবর্তে তোমরা ঘরবাড়ি ত্যাগ করে বের হয়ে যাও। আল্লাহর যমীন অনেক প্রশস্ত। যেখানে আল্লাহর বন্দেগী করার সুযোগ আছে সেখানে চলে যাও।

এসব কথার সাথে সাথে কাফেরদেরকে বুঝাবার দিকটিও বাদ দেয়া হয়নি। তাওহীদ ও আখেরাত উভয় সত্যকে যুক্তিসহকারে তাদেরকে বুঝাবার চেষ্টা করা হয়েছে। শিরককে খণ্ডন করা হয়েছে। বিশ্ব-জাহানের নির্দশনাবলীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে তাদেরকে জানানো হয়েছে যে, আমার নবী তোমাদের সামনে যে শিক্ষা পেশ করছেন এ নির্দশনাবলী তার সত্যতা প্রমাণ করছে।

وَكَأَيِّن مِّن دَآبَّةٍۢ لَّا تَحْمِلُ رِزْقَهَا ٱللَّهُ يَرْزُقُهَا وَإِيَّاكُمْ ۚ وَهُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلْعَلِيمُ
৬০) কত জীব- জানোয়ার আছে যারা নিজেদের জীবিকা বহন করে না। আল্লাহই তাদেরকে জীবিকা দেন এবং তোমাদের জীবিকাদাতাও তিনিই, তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন।৯৯
৯৯) অর্থাৎ হিজরত করার ব্যাপারে তোমাদের প্রাণের চিন্তার মতো জীবিকার চিন্তায়ও পেরেশান হওয়া উচিত নয়। তোমাদের চোখের সামনে এই যে অসংখ্য পশুপাখি ও জলজপ্রাণী জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে বিচরণ করে বেড়াচ্ছে, এদের মধ্য থেকে কে তার জীবিকা বহন করে ফিরছে? আল্লাহই তো এদের সবাইকে প্রতিপালন করছেন। যেখানেই যায় আল্লাহর অনুগ্রহে এরা কোন না কোনো প্রকারে জীবিকা লাভ করেই থাকে। কাজেই তোমরা একথা ভেবে সাহস হারিয়ে বসো না যে, যদি ঈমান রক্ষার জন্য বাড়িঘর ছেড়ে বের হয়ে পড়ি তাহলে খাবো কি? আল্লাহ‌ যেখান থেকে তার অসংখ্য সৃষ্টিকে রিযিক দিচ্ছেন সেখান থেকে তোমাদেরও দেবেন। ঠিক একথা সাইয়্যিদিনা মসীহ আলাইহিস সালাম তার সাথীদেরকে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেনঃ “কেহই দুই কর্তার দাসত্ব করিতে পারে না, কেননা সে হয়ত একজনকে দ্বেষ করিবে, আর একজনকে প্রেম করিবে, নয়ত একজনের অনুরক্ত হইবে, আর একজনকে তুচ্ছ করিবে; তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না। এইজন্য আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, “কি ভোজন করিব, কি পান করিব’ বলিয়া প্রাণের বিষয়ে, কিংবা ‘কি পরিব’ বলে শরীরের বিষয়ে ভাবিত হইও না; ভক্ষ্য হতে প্রাণ ও বস্ত্র হতে শরীর কি বড় বিষয় নয়? আকাশের পক্ষীদের প্রতি দৃষ্টিপাত কর? তাহারা বুনেওনা, কাটেওনা, গোলাঘরে সঞ্চয়ও করে না, তথাপি তোমাদের স্বর্গীয় পিতা তাহাদিগকে আহার দিয়া থাকেন; তোমরা কি তাহাদের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ নও? আর তোমাদের মধ্যে কে ভাবিত হয়ে আপন বয়স এক হস্ত মাত্র বৃদ্ধি করিতে পারে? আর বস্ত্রের নিমিত্ত কেন ভাবিত হও? ক্ষেত্রের কানুড় পুষ্পের বিষয়ে বিবেচনা কর, সেগুলি কেমন বাড়ে; সে সকল শ্রম করে না, সূতাও কাটেনা; তথাপি আমি তোমাদিগকে বলতেছি শলোমনও আপনার সমস্ত প্রতাপে ইহার একটির ন্যায় সুসজ্জিত ছিলেন না। ভাল ক্ষেত্রের যে তৃণ আজ আছে ও কাল চুলায় ফেলিয়া দেওয়া যাইবে, তা যদি ঈশ্বর এরূপ বিভূষিত করেন, তবে হে অল্প বিশ্বাসীরা, তোমাদিগকে কি আরও অধিক নিশ্চয় বিভূষিত করিবেন না? অতএব ইহা বলিয়া ভাবিত হইও না যে, “কি ভোজন করিব? ” বা “কি পান করিব? ” বা “কি পরিব? ” কেননা পরজাতীয়েরাই এ সকল বিষয় চেষ্টা করিয়া থাকে; তোমাদের স্বর্গীয় পিতা-ত জানেন যে, এই সকল দ্রব্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে। কিন্তু তোমরা প্রথমে তাহার রাজ্য ও তার ধার্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহলে ঐ সকল দ্রব্যও তোমাদের দেওয়া হইবে। অতএব কল্যকার নিমিত্ত ভাবিত হইও না, কেননা কল্য আপনার বিষয় ভাবিত হইবে; দিনের কষ্ট দিনের জন্যই যথেষ্ট।” (মথি ৬: ২৪-৩৪)

কুরআন ও বাইবেলের এ উক্তিগুলোর পটভূমি অভিন্ন। সত্যের দাওয়াতের পথে এমন একটি পর্যায়ে এসে যায় যখন একজন সত্যপ্রিয় মানুষের জন্য উপকরণের জগতের সমস্ত সহায় ও নির্ভরতা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে নিছক আল্লাহর ওপর ভরসা করে প্রাণপণ প্রচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না। এ অবস্থায় যারা অংক কষে ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিচার করে এবং পা বাড়াবার আগে প্রাণ রক্ষা ও জীবিকা উপার্জনের নিশ্চয়তা খুঁজে বেড়ায় তারা কিছুই করতে পারে না। আসলে এ ধরনের অবস্থা পরিবর্তিত হয় এমন সব লোকের শক্তির জোরে যারা প্রতিমুহূর্তে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং সব ধরনের বিপদ মাথা পেতে নেবার জন্য নির্দ্ধিধায় এগিয়ে যায়। তাদেরই ত্যাগ ও কুরবানীর ফলে শেষ পর্যন্ত এমন সময় আসে যখন আল্লাহর কালেমা বুলন্দ হয়ে যায় এবং তার মোকাবিলায় অন্য সমস্ত মত পথ অবনমিত হয়।

وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ ٱلسَّمَـٰوَٰتِ وَٱلْأَرْضَ وَسَخَّرَ ٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُ ۖ فَأَنَّىٰ يُؤْفَكُونَ
৬১) যদি ১০০ তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো পৃথিবী ও আকাশসমূহ কে সৃষ্টি করেছেন এবং চন্দ্র ও সূর্যকে কে নিয়ন্ত্রিত করে রেখেছেন তাহলে অবশ্যই তারা বলবে আল্লাহ, এরপর এরা প্রতারিত হচ্ছে কোন দিক থেকে?
১০০) এখান থেকে আবার মক্কায় কাফেরদের প্রতি বক্তব্যের মোড় ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে।
)
ٱللَّهُ يَبْسُطُ ٱلرِّزْقَ لِمَن يَشَآءُ مِنْ عِبَادِهِۦ وَيَقْدِرُ لَهُۥٓ ۚ إِنَّ ٱللَّهَ بِكُلِّ شَىْءٍ عَلِيمٌۭ
৬২) আল্লাহই তার বান্দাদের মধ্য থেকে যাকে ইচ্ছা রিযিক প্রসারিত করে দেন এবং যাকে ইচ্ছা সংকীর্ণ করে দেন। নিশ্চিতভাবে আল্লাহ‌ সব জিনিস জানেন।
)
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّن نَّزَّلَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ مَآءًۭ فَأَحْيَا بِهِ ٱلْأَرْضَ مِنۢ بَعْدِ مَوْتِهَا لَيَقُولُنَّ ٱللَّهُ ۚ قُلِ ٱلْحَمْدُ لِلَّهِ ۚ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ
৬৩) আর যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, কে আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেছেন এবং তার সাহায্যে মৃত পতিত ভূমিকে সঞ্জীবিত করেছেন, তাহলে তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহ। বলো, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য ১০১ কিন্তু অধিকাংশ লোক বোঝে না।
১০১) এখানে “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য” শব্দগুলোর দু’টি অর্থ প্রকাশিত হচ্ছে। একটি অর্থ হচ্ছে, এসব যখন আল্লাহরই কাজ তখন একমাত্র তিনিই প্রশংসার অধিকারী। অন্যেরা প্রশংসালাভের অধিকার অর্জন করলো কোথায় থেকে? দ্বিতীয় অর্থটি হচ্ছে, আল্লাহর শোকর, তোমরা নিজেরাও একথা স্বীকার করছো।
)
وَمَا هَـٰذِهِ ٱلْحَيَوٰةُ ٱلدُّنْيَآ إِلَّا لَهْوٌۭ وَلَعِبٌۭ ۚ وَإِنَّ ٱلدَّارَ ٱلْـَٔاخِرَةَ لَهِىَ ٱلْحَيَوَانُ ۚ لَوْ كَانُوا۟ يَعْلَمُونَ
৬৪) আর এ দুনিয়ার জীবন একটি খেলা ও মন ভুলানোর সামগ্রী ছাড়া আর কিছুই নয়।১০২
১০২) অর্থাৎ এর বাস্তবতা শুধুমাত্র এতটুকুই যেমন ছোট ছেলেরা কিছুক্ষণের জন্য নেচে গেয়ে আমোদ করে এবং তারপর যার যার ঘরে চলে যায়। এখানে যে রাজা হয়ে গেছে সে আসলে রাজা হয়ে যায়নি বরং শুধুমাত্র রাজার অভিনয় করছে। এক সময় তার এ খেলা শেষ হয়ে যায়। তখন সে ঠিক তেমনি দ্বীনহীন অবস্থায় রাজ সিংহাসন থেকে বিদায় নেয় যেভাবে এ দুনিয়ার বুকে এসেছিল। অনুরূপভাবে জীবনের কোন একটি আকৃতিও এখানে স্থায়ী ও চিরন্তন নয়। যে যে অবস্থায়ই আছে সাময়িকভাবে একটি সীমিত সময়কালের জন্যই আছে। মাত্র কয়েকদিনের জীবনের সাফল্যের জন্য যারা প্রাণপাত করে এবং এরই জন্য বিবেক ও ঈমান বিকিয়ে দিয়ে সামান্য কিছু আয়েশ আরামের উপকরণ ও শক্তি-প্রতিপত্তির জৌলুস করায়ত্ত করে নেয়, তাদের এ সমস্ত কাজ মন ভুলানো ছাড়া আর কিছুই নয়। এসব খেলনার সাহায্যে তারা যদি দশ, বিশ বা ষাট সত্তর বছর মন ভুলানোর কাজ করে থাকে এবং তারপর শূন্য হাতে মৃত্যুর দরোজা অতিক্রম করে ভ্রমণ জগতে পৌঁছে যায় সেখানকার স্থায়ী ও চিরন্তন জীবনে তাদের এ খেলা এক প্রতিপত্তিহীন রোগে পরিণত হয়, তাহলে এ ছেলে ভুলানোর লাভ কি?