আলে ইমরান

সুরার ভূমিকা
দেখতে ক্লিক করুন

X close

নামকরণ

এই সূরার এক জায়গায় ‘‘আলে ইমরানের’’ কথা বলা হয়েছে। একেই আলামত হিসেবে এর নাম গণ্য করা হয়েছে।

নাযিলের সময়-কাল ও বিষয়বস্তুর অংশসমূহ

প্রথম ভাষণটি সূরার প্রথম থেকে শুরু হয়ে চতুর্থ রুকূ’র প্রথম দু’ আয়াত পর্যন্ত চলেছে এবং এটি সম্ভবত বদর যুদ্ধের নিকটবর্তী সময়ে নাযিল হয়।

দ্বিতীয় ভাষণটি

إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى آدَمَ وَنُوحًا وَآلَ إِبْرَاهِيمَ وَآلَ عِمْرَانَ عَلَى الْعَالَمِينَ

(আল্লাহ আদম, নূহ, ইবরাহীমের বংশধর ও ইমরানের বংশধরদের সারা দুনিয়াবাসীর ওপর প্রাধান্য দিয়ে নিজের রিসালাতের জন্য বাছাই করে নিয়েছিলেন।) আয়াত থেকে শুরু হয়ে ষষ্ঠ রুকূ’র শেষে গিয়ে শেষ হয়েছে। ৯ হিজরীতে নাজরানের প্রতিনিধি দলের আগমনকালে এটি নাযিল হয়।

তৃতীয় ভাষণটি সপ্তম রুকূ’র শুরু থেকে নিয়ে দ্বাদশ রুকূ’র শেষ অব্দি চলেছে। প্রথম ভাষণের সাথে সাথেই এটি নাযিল হয়।

চতুর্থ ভাষণটি ত্রয়োদশ রুকূ’ থেকে শুরু করে সূরার শেষ পর্যন্ত চলেছে। ওহোদ যুদ্ধের পর এটি নাযিল হয়।

সম্বোধন ও আলোচ্য বিষয়াবলী

এই বিভিন্ন ভাষণকে এক সাথে মিলিয়ে যে জিনিসটি একে একটি সুগ্রথিত ধারাবাহিক প্রবন্ধে পরিণত করেছে সেটি হচ্ছে এর উদ্দেশ্য, মূল বক্তব্য ও কেন্দ্রীয় বিষয়বস্তুর সামঞ্জস্য ও একমুখীনতা। সূরায় বিশেষ করে দু’টি দলকে সম্বোধন করা হয়েছে। একটি দল হচ্ছে, আহলী কিতাব (ইহুদী ও খৃস্টান) এবং দ্বিতীয় দলটিতে রয়েছে এমন সব লোক যারা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ঈমান এনেছিল।

সূরা বাকারায় ইসলামের বাণী প্রচারের যে ধারা শুরু করা হয়েছিল প্রথম দলটির কাছে সেই একই ধারায় প্রচার আরো জোরালো করা হয়েছে। তাদের আকীদাগত ভ্রষ্টতা ও চারিত্রিক দুষ্কৃতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে তাদেরকে জানানো হয়েছে যে, এই রসূল এবং এই কুরআন এমন এক দ্বীনের দিকে নিয়ে আসছে প্রথম থেকে সকল নবীই যার দাওয়াত দিয়ে আসছেন এবং আল্লাহর প্রকৃতি অনুযায়ী যা একমাত্র সত্য দ্বীন। এই দ্বীনের সোজা পথ ছেড়ে তোমরা যে পথ ধরেছো তা যেসব কিতাবকে তোমরা আসমানী কিতাব বলে স্বীকার করো তাদের দৃষ্টিতেও সঠিক নয়। কাজেই যার সত্যতা তোমরা নিজেরাও অস্বীকার করতে পারো না তার সত্যতা স্বীকার করে নাও।

দ্বিতীয় দলটি এখন শ্রেষ্ঠতম দলের মর্যাদা লাভ করার কারণে তাকে সত্যের পতাকাবাহী ও বিশ্বমানবতার সংস্কার ও সংশোধনের দায়িত্ব দান করা হয়েছে। এই প্রসংগে সূরা বাকারায় যে নির্দেশ শুরু হয়েছিল এখানে আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে। পূর্ববর্তী উম্মতদের ধর্মীয় ও চারিত্রিক অধপতনের ভয়াবহ চিত্র দেখিয়ে তাকে তাদের পদাংক অনুসরণ করা থেকে দূরে থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। একটি সংস্কারবাদী দল হিসেবে সে কিভাবে কাজ করবে এবং যেসব আহলি কিতাব ও মুনাফিক মুসলমান আল্লাহর পথে নানা প্রকার বাধা বিপত্তি সৃষ্টি করছে তাদের সাথে কি আচরণ করবে, তাও তাকে জানানো হয়েছে। ওহোদ যুদ্ধে তাঁর মধ্যে যে দুর্বলতা দেখা দিয়েছিল তা দূর করার জন্যও তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।

এভাবে এ সূরাটি শুধুমাত্র নিজের অংশগুলোর মধ্যে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি এবং নিজের অংশগুলোকে একসূত্রে গ্রথিত করেনি বরং সূরা বাকারার সাথেও এর নিকট সম্পর্ক দেখা যাচ্ছে। এটি একেবারেই তার পরিশিষ্ট মনে হচ্ছে। সূরা বাকারার লাগোয়া আসনই তার স্বাভাবিক আসন বলে অনুভূত হচ্ছে।

নাযিলের কার্যকারণ

সূরাটির ঐতিহাসিক পটভূমি হচ্ছেঃ

একঃ এই সত্য দ্বীনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীদেরকে সূরা বাকারায় পূর্বাহ্নেই যেসব পরীক্ষা, বিপদ –আপদ ও সংকট সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছিল তা পূর্ণ মাত্রায় সংঘটিত হয়েছিল। বদর যুদ্ধে ঈমানদারগণ বিজয় লাভ করলেও এ যুদ্ধটি যেন ছিল ভীমরুলের চাকে ঢিল মারার মতো ব্যাপার। এ প্রথম সশস্ত্র সংঘর্ষটি আরবের এমন সব শক্তিগুলোকে অকস্মাত নাড়া দিয়েছিল যারা এ নতুন আন্দোলনের সাথে শত্রুতা পোষণ করতো। সবদিকে ফুটে উঠছিল ঝড়ের আলামত। মুসলমানদের ওপর একটি নিরন্তর ভীতি ও অস্থিরতার অবস্থা বিরাজ করছিল। মনে হচ্ছিল, চারপাশের সারা দুনিয়ার আক্রমণের শিকার মদীনার এ ক্ষুদ্র জনবসতিটিকে দুনিয়ার বুক থেকে মুছে ফেলে দেয়া হবে। মদীনার অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর এ পরিস্থিতির অত্যন্ত বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। মদিনা ছিল তো একটি ছোট্ট মফস্বল শহর। জনবসতি কয়েক শ’ ঘরের বেশী ছিল না। সেখানে হঠাৎ বিপুল সংখ্যক মুহাজিরের আগমন। ফলে অর্থনৈতিক ভারসাম্য তো এমনিতেই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তার ওপর আবার এই যুদ্ধাবস্থার কারণে বাড়তি বিপদ দেখা দিল।

দুইঃ হিজরতের পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার আশপাশের ইহুদী গোত্রগুলোর সাথে যে চুক্তি সম্পাদন করেছিলেন তারা সেই চুক্তির প্রতি সামান্যতমও সম্মান প্রদর্শন করেনি। বদর যুদ্ধকালে এই আহলি কিতাবদের যাবতীয় সহানুভূতি তাওহীদ ও নবুয়াত এবং কিতাব ও আখেরাত বিশ্বাসী মুসলমানদের পরিবর্তে মূর্তিপূজারী মুশরিকদের সাথে ছিল। বদর যুদ্ধের পর তারা কুরাইশ ও আরবদের অন্যান্য গোত্রগুলোকে প্রকাশ্যে মুসলমানদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে প্রতিশোধ গ্রহণে উদ্বুদ্ধ করতে থাকে। বিশেষ করে বনী নাযির সরদার কা’ব ইবনে আশরাফ তো এ ব্যাপারে নিজের বিরোধমূলক প্রচেষ্টাকে অন্ধ শত্রুতা বরং নীচতার পর্যায়ে নামিয়ে আনে। মদিনাবাসীদের সাথে এই ইহুদীদের শত শত বছর থেকে যে বন্ধুত্ব ও প্রতিবেশীসুলভ সম্পর্ক চলে আসছিল তার কোন পরোয়াই তারা করেনি। শেষ যখন তাদের দুষ্কর্ম ও চুক্তি ভংগ সীমা ছাড়িয়ে যায় তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বদর যুদ্ধের কয়েক মাস পরে এই ইহুদী গোত্রগুলোর সবচেয়ে বেশী দুষ্কর্মপরায়ণ ‘বনী কাইনুকা’ গোত্রের ওপর আক্রমণ চালান এবং তাদেরকে মদীনার শহরতলী থেকে বের করে দেন। কিন্তু এতে অন্য ইহুদী গোত্রগুলোর হিংসার আগুন আরো তীব্র হয়ে ওঠে। তারা মদিনার মুনাফিক মুসলমান ও হিযাজের মুশরিক গোত্রগুলোর সাথে চক্রান্ত করে ইসলাম ও মুসলমানদের জন্য চার দিকে অসংখ্য বিপদ সৃষ্টি করে। এমনকি কখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রাণ নাশের জন্য তাঁর ওপর আক্রমণ চালানো হয় এই আশংকা সর্বক্ষণ দেখা দিতে থাকে। এ সময় সাহাবায়ে কেরাম সবসময় সশস্ত্র থাকতেন। নৈশ আক্রমণের ভয়ে রাতে পাহারা দেয়া হতো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি কখনো সামান্য সময়ের জন্যও চোখের আড়াল হতেন সাহাবায়ে কেরাম উদ্বেগ আকুল হয়ে তাঁকে খুঁজতে বের হতেন।

তিনঃ বদরে পরাজয়ের পর কুরাইশদের মনে এমনিতেই প্রতিশোধের আগুন জ্বলছিল, ইহুদীরা তার ওপর কেরোসিন ছিটিয়ে দিল। ফলে এক বছর পরই মক্কা থেকে তিন হাজার সুসজ্জিত সৈন্যের একটি দল মদীনা আক্রমণ করলো। এ যুদ্ধটি হলো ওহোদ পাহাড়ের পাদদেশে। তাই ওহোদের যুদ্ধ নামেই এটি পরিচিত। এ যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য মদীনা থেকে এক হাজার লোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে বের হয়েছিল। কিন্তু পথে তিন’শ মুনাফিক হঠাৎ আলাদা হয়ে মদীনার দিকে ফিরে এলো। নবীর (সা.) সাথে যে সাত’শো লোক রয়ে গিয়েছিল তার মধ্যেও মুনাফিকদের একটি ছোট দল ছিল। যুদ্ধ চলা কালে তারা মুসলমানদের মধ্যে ফিত্‌না সৃষ্টি করার সম্ভাব্য সব রকমের প্রচেষ্টা চালালো। এই প্রথমবার জানা গেলো, মুসলমানদের স্বগৃহে এত বিপুল সংখ্যক আস্তীনের সাপ লুকানো রয়েছে এবং তারা এভাবে বাইরের শক্রদের সাথে মিলে নিজেদের ভাই-বন্ধু ও আত্মীয়-স্বজনদের ক্ষতি করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।

চারঃ ওহোদের যুদ্ধে মুসলমানদের পরাজয় যদিও মুনাফিকদের কৌশলের একটি বড় অংশ ছিল তবুও মুসলমানদের নিজেদের দুর্বলতার অংশও কম ছিল না। একটি বিশেষ চিন্তাধারা ও নৈতিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে যে দলটি এই সবেমাত্র গঠিত হয়েছিল, যার নৈতিক প্রশিক্ষণ এখনো পূর্ণ হতে পারেনি এবং নিজের বিশ্বাস ও নীতি সমর্থনে যার লড়াই করার এই মাত্র দ্বিতীয় সুযোগ ছিল তার কাজে কিছু দুর্বলতা প্রকাশ হওয়াটা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার ছিল। তাই যুদ্ধের পর এই যাবতীয় ঘটনাবলীর ওপর বিস্তারিত মন্তব্য করা এবং তাতেই ইসলামের দৃষ্টিতে মুসলমানদের মধ্যে যেসব দুর্বলতা পাওয়া গিয়েছিল তার মধ্য থেকে প্রত্যেকটির প্রতি অংগুলি নির্দেশ করে তার সংশোধনের জন্য নির্দেশ দেবার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল। এ প্রসংগে একথাটি দৃষ্টি সমক্ষে রাখার উপযোগীতা রাখে যে, অন্য জেনারেলরা নিজেদের যুদ্ধের পরে তার ওপর যে মন্তব্য করেন এ যুদ্ধের ওপরে কুরআনের মন্তব্য তা থেকে কত বিভিন্ন!

إِنَّ ٱلَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِـَٔايَـٰتِ ٱللَّهِ وَيَقْتُلُونَ ٱلنَّبِيِّـۧنَ بِغَيْرِ حَقٍّۢ وَيَقْتُلُونَ ٱلَّذِينَ يَأْمُرُونَ بِٱلْقِسْطِ مِنَ ٱلنَّاسِ فَبَشِّرْهُم بِعَذَابٍ أَلِيمٍ
২১) যারা আল্লাহ‌র বিধান ও হিদায়াত মানতে অস্বীকার করে এবং তাঁর নবীদেরকে অন্যায়ভাবে হত্যা করে আর এমন লোকদের প্রাণ সংহার করে, যারা মানুষের মধ্যে ন্যায়, ইনসাফ ও সততার নির্দেশ দেবার জন্য এগিয়ে আসে, তাদের কঠিন শাস্তির সুসংবাদ দাও।১৯
১৯) এটি একটি ব্যঙ্গাত্মক বর্ণনাভঙ্গী। এই বক্তব্যের অর্থ হচ্ছে, নিজেদের যে সমস্ত কীর্তিকলাপের দরুন তারা আজ আনন্দে ফুলে উঠেছে এবং মনে করছে যে তারা খুব ভালো কাজ করে বেড়াচ্ছে, তাদের জানিয়ে দাও, তোমাদের এ সমস্ত কাজের এই হচ্ছে প্রতিফল।
أُو۟لَـٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ حَبِطَتْ أَعْمَـٰلُهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا وَٱلْـَٔاخِرَةِ وَمَا لَهُم مِّن نَّـٰصِرِينَ
২২) এরা এমন সব লোক যাদের কর্মকাণ্ড (আমল) দুনিয়া ও আখেরাত উভয় স্থানেই নষ্ট হয়ে গেছে২০ এবং এদের কোন সাহায্যকারী নেই।২১
২০) অর্থাৎ তারা নিজেদের শক্তি ও প্রচেষ্টাসমূহ এমন সব কাজে নিয়োজিত করেছে যার ফল দুনিয়াতে যেমন খারাপ তেমনি আখেরাতেও খারাপ।
২১) অর্থাৎ এমন কোন শক্তি নেই, যে তাদের এসব ভুল প্রচেষ্টা ও অসৎকার্যাবলীকে সুফলদায়ক করতে অথবা কমপক্ষে খারাপ পরিণতি থেকে বাঁচাতে পারে। দুনিয়ায় বা আখেরাতে অথবা উভয় স্থানে তাদের কাজে লাগবে বলে যেসব শক্তির ওপর তারা ভরসা করে, তাদের মধ্য থেকে আসলে কেউই তাদের সাহায্যকারী প্রমাণিত হবে না।
أَلَمْ تَرَ إِلَى ٱلَّذِينَ أُوتُوا۟ نَصِيبًۭا مِّنَ ٱلْكِتَـٰبِ يُدْعَوْنَ إِلَىٰ كِتَـٰبِ ٱللَّهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ يَتَوَلَّىٰ فَرِيقٌۭ مِّنْهُمْ وَهُم مُّعْرِضُونَ
২৩) তুমি কি দেখনি কিতাবের জ্ঞান থেকে যারা কিছু অংশ পেয়েছে, তাদের কি অবস্থা হয়েছে? তাদের যখন আল্লাহ‌র কিতাবের দিকে সে অনুযায়ী তাদের পরস্পরের মধ্যে ফায়সালা করার জন্য আহবান জানানো হয়২২ তখন তাদের মধ্য থেকে একটি দল পাশ কাটিয়ে যায় এবং এই ফায়সালার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়।
২২) অর্থাৎ তাদের বলা হয়, আল্লাহ‌র কিতাবকে চূড়ান্ত সনদ হিসেবে মেনে নাও এবং তাঁর ফায়সালার সামনে মাথা নত করে দাও। এই কিতাবের দৃষ্টিতে যা হক প্রমাণিত হয় তাকে হক বলে এবং যা বাতিল প্রমাণিত হয় তাকে বাতিল বলে মেনে নাও। এখানে মনে রাখতে হবে, আল্লাহ‌র কিতাব বলতে এখানে তাওরাত ও ইঞ্জিলকে বুঝানো হয়েছে। আর কিতাবের জ্ঞানের কিছু অংশ লাভকারী বলতে ইহুদী ও খৃস্টান আলেমদের কথা বুঝানো হয়েছে।
)
ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا۟ لَن تَمَسَّنَا ٱلنَّارُ إِلَّآ أَيَّامًۭا مَّعْدُودَٰتٍۢ ۖ وَغَرَّهُمْ فِى دِينِهِم مَّا كَانُوا۟ يَفْتَرُونَ
২৪) তাদের এ কর্মপদ্ধতির কারণ হচ্ছে এই যে, তারা বলেঃ “জাহান্নামের আগুন তো আমাদের স্পর্শও করবে না। আর যদি জাহান্নামের শাস্তি আমরা পাই তাহলে তা হবে মাত্র কয়েক দিনের।”২৩ তাদের মনগড়া বিশ্বাস নিজেদের দ্বীনের ব্যাপারে তাদেরকে বড়ই ভুল ধারণার মধ্যে নিক্ষেপ করেছে।
২৩) তারা নিজেদেরকে আল্লাহ‌র প্রিয়পাত্র মনে করে বসেছে। তাদের মনে এই ভুল ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, তারা যাই কিছু করুক না কেন জান্নাত তাদের নামে লিখে দেয়া হয়ে গেছে, তারা ঈমানদার গোষ্ঠী, তারা উমুকের সন্তান, উমুকের উম্মাত, উমুকের মুরীদ এবং উমুকের হাতে হাত রেখেছে, কাজেই জাহান্নামের আগুনের কোন ক্ষমতাই নেই তাদেরকে স্পর্শ করার। আর যদিওবা তাদেরকে কখনো জাহান্নামে দেয়া হয়, তাহলেও তা হবে মাত্র কয়েক দিনের জন্য। গোনাহের যে দাগগুলো গায়ে লেগে গেছে সেগুলো মুছে ফেলে দিয়ে সেখান থেকে তাদেরকে সোজা জান্নাতে পাঠিয়ে দেয়া হবে। এ ধরনের চিন্তাধারা তাদের এমনি নির্ভীক বানিয়ে দিয়েছিল, যার ফলে তারা নিশ্চিন্তে কঠিন থেকে কঠিনতর অপরাধ করে যেতো, নিকৃষ্টতম গোনাহের কাজ করতো, প্রকাশ্যে সত্যের বিরোধিতা করতো এবং এ অবস্থায় তাদের মনে সামান্যতম আল্লাহ‌র ভয়ও জাগতো না।
)
فَكَيْفَ إِذَا جَمَعْنَـٰهُمْ لِيَوْمٍۢ لَّا رَيْبَ فِيهِ وَوُفِّيَتْ كُلُّ نَفْسٍۢ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
২৫) কিন্তু সেদিন কি অবস্থা হবে, যেদিন আমি তাদের একত্র করবো, যেদিনটির আসা একেবারেই অবধারিত? সেদিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে তার উপার্জনের পুরোপুরি প্রতিদান দেয়া হবে এবং কারো ওপর জুলুম করা হবে না।
)