আল মাআরিজ
নামকরণ
সূরার তৃতীয় আয়াতের ذِي الْمَعَارِجِ যিল মা'আরিজি শব্দটি থেকে এর নামকরণ হয়েছে।
নাযিল হওয়ার সময়-কাল
কাফেররা কিয়ামত, আখেরাত এবং দোযখ ও বেহেশত সম্পর্কিত বক্তব্য নিয়ে বিদ্রূপ ও উপহাস করতো এবং রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এ মর্মে চ্যালেঞ্জ করতো যে, তুমি যদি সত্যবাদী হয়ে থাকো আর তোমাকে অস্বীকার করে আমরা জাহান্নামের শাস্তিলাভের উপযুক্ত হয়ে থাকি তাহলে তুমি আমাদেরকে যে কিয়ামতের ভয় দেখিয়ে থাকো তা নিয়ে এসো। যে কাফেররা এসব কথা বলতো এ সূরায় তাদের সতর্ক করা হয়েছে এবং উপদেশ বাণী শোনানো হয়েছে। তাদের এ চ্যালেঞ্জের জবাবে এ সূরার গোটা বক্তব্য পেশ করা হয়েছে।
সূরার প্রথমে বলা হয়েছে প্রার্থনাকারী আযাব প্রার্থনা করছে। নবীর দাওয়াত অস্বীকারকারীর ওপর সে আযাব অবশ্যই পতিত হবে। আর যখন আসবে তখন কেউ তা প্রতিরোধ করতে পারবে না। তবে তার আগমন ঘটবে নির্ধারিত সময়ে। আল্লাহর কাজে দেরী হতে পারে। কিন্তু তার কাছে বেইনসাফী বা অবিচার নেই। কিন্তু আমি দেখছি তা অতি নিকটে।
এরপর বলা হয়েছে, এসব লোক হাসি-ঠাট্টাচ্ছলে কিয়ামত দ্রুত নিয়ে আসার দাবি করছে। অথচ কত কঠোর ও ভয়ানক সেই কিয়ামত।যখন তা আসবে তখন এসব লোকের কি যে ভয়ানক পরিণতি হবে। সে সময় এরা আযাব থেকে বাঁচার জন্য নিজের স্ত্রী, সন্তান-সন্তুতি এবং নিকট আত্মীয়দেরকে বিনিময় স্বরূপ দিয়ে দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। কিন্তু কোনভাবেই আযাব থেকে নিষ্কৃতি লাভ করতে পারবে না।
এরপর মানুষকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, সেদিন মানুষের ভাগ্যের ফায়সালা হবে সম্পূর্ণরূপে তাদের আকীদা-বিশ্বাস নৈতিক চরিত্র ও কৃতকর্মের ভিত্তিতে। দুনিয়ার জীবনে যারা ন্যায় ও সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং ধন-সম্পদ জমা করে ডিমে তা দেয়ার মত সযত্নে আগলে রেখেছে তারা হবে জাহান্নামের উপযুক্ত। আর যারা আল্লাহর, আযাবের ভয়ে ভীত থেকেছে। আখেরাতকে বিশ্বাস করেছে, নিয়মিত নামায পড়েছে, নিজের উপার্জিত সম্পদ দিয়ে আল্লাহর অভাবী বান্দাদের হক আদায় করেছে, ব্যভিচার থেকে নিজেকে মুক্ত রেখেছে, আমানতের খেয়ানত করেনি, ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতি এবং কথাও কাজ যথাযথভাবে রক্ষা করে চলেছে এবং সাক্ষ্যদানের বেলায় সত্যবাদিতার ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে তারা সম্মান ও মর্যাদার সাথে জান্নাতে স্থান লাভ করবে।
পরিশেষে মক্কার কাফেরদের সাবধান করা হয়েছে যারা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখামাত্র বিদ্রূপ ও উপহাস করার জন্য চারদিক থেকে ঝাঁপিয়ে পড়তো। তাদেরকে বলা হয়েছে যদি তোমরা তাঁকে না মানো তাহলে আল্লাহ তা'আলা অন্যদেরকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এই বলে উপদেশ দেয়া যেন তিনি এসব উপহাস- বিদ্রূপের তোয়াক্কা না করেন। এরা যদি কিয়ামতের লাঞ্ছনা দেখার জন্যই জিদ ধরে থাকে তাহলে তাদেরকে এ অর্থহীন তৎপরতায় লিপ্ত থাকতে দিন। তারা নিজেরাই এর দুঃখজনক পরিণতি দেখতে পাবে।