আল হুমাযা
নামকরণ
প্রথম আয়াতের হুমাযাহ (هُمَزَةٍ) শব্দটিকে এর নাম হিসেবে গণ্য করা হয়েছে।নাযিলের সময়-কাল
এ সূরাটির মক্কী হবার ব্যাপারে সকল মুফাস্সির একমত পোষণ করেছেন। এর বক্তব্য বিষয় ও বর্ণনাভংগী বিশ্লেষণ করলে এটিও রসূলের নবুওয়াত পাওয়ার পর মক্কায় প্রথমদিকে অবতীর্ণ সূরাগুলোর অন্তর্ভুক্ত বলে মনে হয়।বিষয়বস্তু ও মূল বক্তব্য
এই সূরায় এমন কিছু নৈতিক অসদবৃত্তির নিন্দা করা হয়েছে যেগুলো জাহেলী সমাজে অর্থলোলুপ ধনীদের মধ্যে পাওয়া যেতো। প্রত্যেক আরববাসী জানতো, এই অসৎ প্রবণতাগুলো যথার্থই তাদের সমাজে সক্রিয় রয়েছে। সবাই এগুলোকে খারাপ মনে করতো। একজনও এগুলোকে সৎগুণ মনে করতো না এবং প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখতো না। এই জঘন্য প্রবণতাগুলো পেশ করার পর আখেরাতে এই ধরনের চরিত্রের অধিকারী লোকদের পরিণাম কি হবে তা বলা হয়েছে। এই দু’টি বিষয় (অর্থাৎ একদিকে এই চরিত্র এবং অন্যদিকে আখেরাতে তার এই পরিণাম) এমনভাবে বর্ণনা করা হয়েছে যার ফলে শ্রোতা নিজে নিজেই এই সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেন যে, এই ধরনের কাজের ও চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তির পরিণাম এটিই হয়ে থাকে। আর যেহেতু দুনিয়ায় এই ধরনের চরিত্রের লোকেরা কোন শাস্তি পায় না বরং উল্টো তাদের আঙুল ফুলে কলাগাছ হতে দেখা যায় তাই আখেরাত অনিবার্যভাবে অনুষ্ঠিত হবেই।সূরা যিলযাল থেকে এ পর্যন্ত যতগুলো সূরা চলে এসেছে এই সূরাটিকে সেই ধারাবাহিকতায় রেখে বিচার করলে মক্কা মু’আয্যমার প্রথম যুগে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস ও তার নৈতিক শিক্ষাবলী মানুষের হৃদয়পটে অংকিত করার জন্য কি পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়েছিল তা মানুষ খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারে। সূরা যিলযালে বলা হয়েছে, আখেরাতে মানুষের সমগ্র আমলনামা তার সামনে রেখে দেয়া হবে। সে দুনিয়ায় যে সামান্য বালুকণা পরিমাণ নেকী বা গোনাহ করেছিল তা সেখানে তার সামনে আসবে না এমনটি হবে না। সূরা আদিয়াত-এ আরবের চতুর্দিকে যেসব লুটতরাজ, হানাহানি, খুনাখুনি ও দস্যূতা জারী ছিল সেদিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। তারপর আল্লাহ প্রদত্ত শক্তিগুলোর এহেন অপব্যবহার তাঁর প্রতি বিরাট অকৃতজ্ঞতা ছাড়া আর কিছুই নয়, এ অনুভূতি জাগ্রত করার পর লোকদেরকে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারটি এই দুনিয়াতেই শেষ হয়ে যাবে না বরং মৃত্যুর পর আর একটি জীবন শুরু হচ্ছে, সেখানে কেবল তোমাদের সমস্ত কাজেরই নয় বরং নিয়তও যাচাই বা পর্যালোচনা করা হবে। আর কোন্ ব্যক্তি কোন্ ধরনের ব্যবহার লাভের যোগ্য তা তোমাদের রব খুব ভালোভাবেই জানে। সূরা আল কারিয়াহতে কিয়ামতের নকশা পেশ করার পর লোকদেরকে এই মর্মে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে যে, মানুষের নেকীর পাল্লা ভারী না গোনাহর পাল্লা ভারী হচ্ছে এরই ওপর নির্ভর করবে আখেরাতে তার ভালো বা মন্দ পরিণাম। যে বস্তুবাদী মানসিকতায় আচ্ছন্ন হয়ে মানুষ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত দুনিয়ার লাভ, স্বার্থ, আয়েশ-আরাম, ভোগ ও মর্যাদা বেশী বেশী করে অর্জন করার ও পরস্পর থেকে অগ্রবর্তী হবার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে সূরা তাকাসুরে তার কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে। তারপর এই গাফলতির অশুভ পরিণতি সম্পর্কে মানুষকে সজাগ করে বলা হয়েছে--- এ দুনিয়া কোন লুটের মাল নয় যে, তার ওপর তোমরা ইচ্ছামতো হাত সাফাই করতে থাকবে। বরং এখানে তুমি এর যেসব নিয়ামত পাচ্ছো তার প্রত্যেকটি কিভাবে অর্জন করেছো এবং কিভাবে ব্যবহার করেছো তার জন্য তোমার রবের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। সূরা আসর-এ একেবারে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা হয়েছে, যদি মানবজাতির ব্যক্তিবর্গের মধ্যে ঈমান ও সৎকাজ না থাকে এবং তার সমাজ ব্যবস্থায় হক পথ অবলম্বন ও সবর করার উপদেশ দেবার রীতি ব্যাপকতা লাভ না করে, তাহলে তার প্রত্যেক ব্যক্তি, দেশ, জাতি এমনকি সারা দুনিয়ার সমস্ত মানুষ ক্ষতির মধ্যে অবস্থান করবে। এর পরপরই আসছে সূরা ‘আল হুমাযাহ।’ এখানে জাহেলী যুগের নেতৃত্বের একটি নমুনা পেশ করে লোকদের সামনে যেন এ প্রশ্ন রাখা হয়েছে যে, এই ধরনের চরিত্র ও কর্মকাণ্ডের অধিকারী ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে না কেন ?