আল আম্বিয়া

সুরার ভূমিকা
দেখতে ক্লিক করুন

X close

নামকরণ

কোন বিশেষ আয়াত থেকে এ সূরার নাম গৃহীত হয়নি। এর মধ্যে যেহেতু ধারাবাহিকভাবে বহু নবীর কথা আলোচিত হয়েছে তাই এর নাম রাখা হয়েছে “আল আম্বিয়া”। এটাও সূরার বিষয়বস্তু ভিত্তিক শিরোনাম নয় বরং নিছক সূরা চিহ্নিত করার একটি আলামত মাত্র।

নাযিলের সময়-কাল

বিষয়বস্তু ও বর্ণনাভংগী উভয়ের দৃষ্টিতেই মনে হয় এর নাযিলের সময়-কাল ছিল মক্কী জীবনের মাঝামাঝি অর্থাৎ আমাদের বিভক্তিকরণের দৃষ্টিতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মক্কী জীবনের তৃতীয় ভাগে। শেষ ভাগের সূরাগুলোর মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায় এর পটভূমিতে তা ফুটে ওঠে না।

বিষয়বস্তু ও কেন্দ্রীয় আলোচ্য

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও কুরাইশ সরদারদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত চলছিল এ সূরায় তা আলোচিত হয়েছে। তারা নবী করীমের (সা.) রিসালাতের দাবী এবং তাওহীদ ও আখেরাত বিশ্বাসের দাওয়াতের বিরুদ্ধে যেসব সন্দেহ-সংশয় ও আপত্তি উত্থাপন করতো তার জবাব দেয়া হয়েছে। তাদের পক্ষ থেকে তাঁর মোকাবিলায় যেসব কৌশল অবলম্বন করা হতো সেগুলোর বিরুদ্ধে হুমকি প্রদর্শন করা হয়েছে এবং তাদের অশুভ ফলাফল জানিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা যে ধরনের গাফলতি ও ঔদ্ধত্যের মনোভাব নিয়ে তাঁর দাওয়াতকে অগ্রাহ্য করছিল সে সম্পর্কে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সবশেষে তাদেরকে একথা বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে যে, যে ব্যক্তিকে তোমরা নিজেদের জন্য দুঃখ ও বিপদ মনে করছো তিনি আসলে তোমাদের জন্য রহমত হয়ে এসেছেন।

ভাষণের মধ্যে বিশেষভাবে যে সমস্ত বিষয় আলোচিত হয়েছে সেগুলো নিচে দেয়া হলোঃ

একঃ মানুষ কখনো রসূল হতে পারে না, মক্কার কাফেরদের এ বিভ্রান্তি এবং এ কারণে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে রসূল মেনে নিতে অস্বীকার করাকে--- বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে নিরসন ও খণ্ডন করা হয়েছে।

দুইঃ নবী করীমের (সা.) ও কুরআনের বিরুদ্ধে তাদের বিভিন্ন ও পরস্পর বিরোধী ধরনের আপত্তি উত্থাপন করা এবং কোন একটি কথার ওপর অবিচল না থাকার--- ওপর সংক্ষিপ্তভাবে কিন্তু অত্যন্ত জোরালো ও অর্থপূর্ণ পদ্ধতিতে পাকড়াও করা হয়েছে।

তিনঃ তাদের ধারণা ছিল, জীবন নেহাতই একটি খেলা, কিছুদিন খেলা করার পর তাকে এমনিই খতম হয়ে যেতে হবে, এর কোন ফল বা পরিণতি ভুগতে হবে না। কোন প্রকার হিসেব-নিকেশ এবং শাস্তি ও পুরস্কারের অবকাশ এখানে নেই। ---যে ধরনের গাফলতি ও অবজ্ঞা সহকারে তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াতকে প্রত্যাখ্যান করছিল, ঐ ধারণাই যেহেতু তার মূল ছিল, তাই বড়ই হৃদয়গ্রাহী পদ্ধতিতে এর প্রতিকার করা হয়েছে।

চারঃ শিরকের প্রতি তাদের অবিচল নিষ্ঠা এবং তাওহীদের বিরুদ্ধে অন্ধ বিদ্বেষ ছিল তাদের ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মধ্যে বিরোধের মূল ভিত্তি। ---এর সংশোধনের জন্য শিরকের বিরুদ্ধে ও তাওহীদের পক্ষে সংক্ষিপ্ত কিন্তু মোক্ষম ও চিত্তাকর্ষক যুক্তি প্রদান করা হয়েছে।

পাঁচঃ এ ভুল ধারণাও তাদের ছিল যে, নবীকে বারবার মিথ্যা বলা সত্ত্বেও যখন তাদের ওপর কোন আযাব আসে না তখন নিশ্চয়ই নবী মিথ্যুক এবং তিনি আমাদের আল্লাহর পক্ষ থেকে যে আযাবের ভয় দেখান তা নিছক অন্তসারশূন্য হুমকি ছাড়া আর কিছুই নয়। ---একে যুক্তি ও উপদেশ উভয় পদ্ধতিতে দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে।

এরপর নবীগণের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলী থেকে কতিপয় নজির পেশ করা হয়েছে। এগুলো থেকে একথা অনুধাবন করানোই উদ্দেশ্য যে, মানবেতিহাসের বিভিন্ন যুগে আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব পয়গম্বর এসেছিলেন তাঁরা সবাই ছিলেন মানুষ। নবুওয়াতের বিশিষ্ট গুণ বাদ দিলে অন্যান্য গুণাবলীর ক্ষেত্রে তাঁরা দুনিয়ার অন্যান্য মানুষদের মতই মানুষ ছিলেন। আল্লাহর সার্বভৌমত্বের গুণাবলী এবং খোদায়ীর সামান্যতম গন্ধও তাদের মধ্যে ছিল না। বরং নিজেদের প্রত্যেকটি প্রয়োজনের জন্য তারা সবসময় আল্লাহর সামনে হাত পাততেন। এই সংগে একই ঐতিহাসিক নজির থেকে আরো দু’টি কথাও সুস্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে একটি হচ্ছে, নবীদের ওপর বিভিন্ন প্রকার বিপদ-আপদ এসেছে এবং তাদের বিরোধীরাও তাঁদেরকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত আল্লাহর পক্ষ থেকে অস্বাভাবিক পদ্ধতিতে তাদেরকে সাহায্য করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, সকল নবী একই দ্বীনের অনুসারী ছিলেন। এবং সেটি ছিল সেই দ্বীন যেটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পেশ করছেন। এটিই মানব সম্প্রদায়ের আসল ধর্ম। বাদবাকি যতগুলো ধর্ম দুনিয়ায় সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো নিছক পথভ্রষ্ট মানুষদের বিভেদাত্মক প্ররোচনা ছাড়া আর কিছুই নয়।

সবশেষে বলা হয়েছে, এ দ্বীনের অনুকরণ ও অনুসরণের ওপরই মানুষের নাজাত ও মুক্তি নির্ভরশীল। যারা এ দ্বীন গ্রহণ করবে তারাই আল্লাহর শেষ আদালত থেকে সফলকাম হয়ে বের হয়ে আসবে এবং তারাই হবে এ পৃথিবীর উত্তরাধিকারী। আর যারা তাকে প্রত্যাখান করবে তারা আখেরাতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট পরিণতির সম্মুখীন হবে। শেষ বিচারের সময় আসার আগেই আল্লাহ নিজের নবীর মাধ্যমে মানুষকে এ সত্য সম্পর্কে অবহিত করে চলছেন, এটি তাঁর বিরাট মেহেরবানী। এ অবস্থায় নবীর আগমনকে যারা নিজেদের জন্য রহমতের পরিবর্তে ধ্বংস মনে করে তারা অজ্ঞ ও মূর্খ ছাড়া আর কিছুই নয়।

وَجَعَلْنَا فِى ٱلْأَرْضِ رَوَٰسِىَ أَن تَمِيدَ بِهِمْ وَجَعَلْنَا فِيهَا فِجَاجًۭا سُبُلًۭا لَّعَلَّهُمْ يَهْتَدُونَ﴿٣١ وَجَعَلْنَا ٱلسَّمَآءَ سَقْفًۭا مَّحْفُوظًۭا ۖ وَهُمْ عَنْ ءَايَـٰتِهَا مُعْرِضُونَ﴿٣٢ وَهُوَ ٱلَّذِى خَلَقَ ٱلَّيْلَ وَٱلنَّهَارَ وَٱلشَّمْسَ وَٱلْقَمَرَ ۖ كُلٌّۭ فِى فَلَكٍۢ يَسْبَحُونَ﴿٣٣ وَمَا جَعَلْنَا لِبَشَرٍۢ مِّن قَبْلِكَ ٱلْخُلْدَ ۖ أَفَإِي۟ن مِّتَّ فَهُمُ ٱلْخَـٰلِدُونَ﴿٣٤ كُلُّ نَفْسٍۢ ذَآئِقَةُ ٱلْمَوْتِ ۗ وَنَبْلُوكُم بِٱلشَّرِّ وَٱلْخَيْرِ فِتْنَةًۭ ۖ وَإِلَيْنَا تُرْجَعُونَ﴿٣٥
(৩১) আর আমি পৃথিবীতে পাহাড় বসিয়ে দিয়েছি, যাতে সে তাদেরকে নিয়ে ঢলে না পড়ে৩০ এবং তার মধ্যে চওড়া পথ তৈরি করে দিয়েছি, ৩১ হয়তো লোকেরা নিজেদের পথ জেনে নেবে।৩২ (৩২) আর আমি আকাশকে করেছি একটি সুরক্ষিত ছাদ,৩৩ কিন্তু তারা এমন যে, এ নিদর্শনাবলীর ৩৪ প্রতি দৃষ্টিই দেয় না। (৩৩) আর আল্লাহই রাত ও দিন তৈরি করেছেন এবং সূর্য ও চন্দ্র সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকেই এক একটি কক্ষপথে সাঁতার কাটছে।৩৫ (৩৪) আর ৩৬ (হে মুহাম্মাদ!) অনন্ত জীবন তো আমি তোমার পূর্বেও কোন মানুষকে দেইনি; যদি তুমি মরে যাও তাহলে এরা কি চিরকাল বেঁচে থাকবে? (৩৫) প্রত্যেক প্রাণীকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।৩৭ আর আমি ভালো ও মন্দ অবস্থার মধ্যে ফেলে তোমাদের সবাইকে পরীক্ষা করছি, ৩৮ শেষ পর্যন্ত তোমাদের আমার দিকে ফিরে আসতে হবে।
৩০) সূরা আন্ নাহাল--- এর ১২ টীকায় এর ব্যাখ্যা বর্ণিত হয়েছে।
৩১) অর্থাৎ পাহাড়ের মধ্যে এমন গিরিপথ, ঝরণা ও নদী তৈরী করে দিয়েছি যার মাধ্যমে পার্বত্য এলাকা অতিক্রম করার ও পৃথিবীর এক অংশ থেকে আর এক অংশে চলাফেরা করার জন্য রাস্তা তৈরী হয়ে গেছে। এভাবে পৃথিবীর অন্যান্য অংশকে এমনভাবে গঠন করা হয়েছে যার ফলে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার পথ তৈরী হয়ে যায় বা তৈরী করে নেয়া যেতে পারে।
৩২) এটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ বাক্য। এর এ অর্থও হয় যে, লোকেরা পৃথিবীতে চলাফেরা করার পথ পাবে, আবার এ অর্থও হয় যে, তারা এই জ্ঞান, বুদ্ধিমত্তা, কলাকৌশল, কারিগরি দক্ষতা ও ব্যবস্থাপনা দেখে মূল সত্যে পৌঁছে যাবার পথ পাবে।
৩৩) ব্যাখ্যার জন্য সূরা আল হিজর, ৮, ১০, ১১ ও ১২ টীকা দেখুন।
৩৪) অর্থাৎ আকাশে যে নিদর্শনগুলো আছে সেগুলোর দিকে।
৩৫) كُلٌّ يَسْبَحُونَ শব্দগুলোই একথা জানিয়ে দিচ্ছে যে, এর অর্থ শুধুমাত্র সূর্য ও চন্দ্র নয় বরং মহাশূন্যের অন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্রও। নয়তো বহুবচনের পরিবর্তে একবচন ব্যবহার করা হতো। فلك শব্দটি আমাদের ভাষায় চক্র শব্দের সমার্থক। আরবী ভাষায় এটি আসমান বা আকাশ শব্দের পরিচিত অর্থই প্রকাশ করে। “সবাই এক একটি ফালাকে (কক্ষপথে) সাঁতরে বেড়াচ্ছে”---এ থেকে দু’টি কথা পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে। এক, প্রত্যেকের ফালাক বা কক্ষপথ আলাদা। দুই, ফালাক এমন কোন জিনিস নয় যেখানে এ গ্রহ-নক্ষত্রগুলো খুঁটির মতো প্রোথিত আছে এবং তারা নিজেরাই এ খুঁটিগুলো নিয়ে ঘুরছে। বরং তারা কোন প্রবাহমান অথবা আকাশ ও মহাশূন্য ধরনের কোন বস্তু, যার মধ্যে এই গ্রহ-নক্ষত্রের চলা ও গতিশীলতা সাঁতার কাঁটার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। (আরো বেশী ব্যাখ্যার জন্য তাফহীমুল কুরআন, সূরা ইয়াসীন ৩৭ টীকা দেখুন)।

প্রাচীন যুগে লোকদের কাছে আকাশ ও পৃথিবীর একত্র হওয়া (رتق) ও পৃথক হয়ে যাওয়া (فتق) পানি থেকে প্রত্যেক সজীব সত্তাকে সৃষ্টি করা এবং গ্রহ-নক্ষত্রের এক একটি ‘ফালাকে’ সাঁতার কাটার ভিন্ন অর্থ ছিল। বর্তমান যুগে পদার্থবিদ্যা (Physics) জীববিদ্যা (Biology) ও জ্যোতির্বিদ্যার (Astronomy) অত্যাধুনিক তথ্যাবলী আমাদের কাছে তাদের অর্থ ভিন্নতর করে দিয়েছে। আমরা বলতে পারি না, আগামীতে মানুষ যেসব তথ্য সংগ্রহ করবে তার ফলে এ শব্দগুলোর অর্থ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। মোট কথা বর্তমান যুগের মানুষ এ তিনটি আয়াতকে সম্পূর্ণরূপে বিজ্ঞানের অত্যাধুনিক তথ্যাবলী অনুযায়ী পাচ্ছে।

এখানে একথটি অনুধাবন করে নিতে হবে যে, وَلَهُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ থেকে নিয়ে كَذَلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ পর্যন্ত ভাষণে শিরক খণ্ডন করা হয়েছে এবং أَوَلَمْ يَرَ الَّذِينَ كَفَرُوا ) থেকে নিয়ে فِي فَلَكٍ يَسْبَحُونَ পর্যন্ত যা কিছু বলা হয়েছে তার মধ্যে তাওহীদের জন্য ইতিবাচক (Positive) যুক্তি দেয়া হয়েছে। মূল বক্তব্য হচ্ছে, তোমাদের সামনে বিশ্ব-জাহানের এই যে ব্যবস্থা আছে, এর মধ্যে কি কোথাও এক আল্লাহ রব্বুল আলামীন ছাড়া আর কারো কোন সৃষ্টি কৌশল তোমরা দেখতে পাচ্ছো? একাধিক ইলাহদের কর্মকূশলতায় কি এ ধরনের ব্যবস্থা গড়ে উঠতে পারে এবং এমন শৃংখলা ও নিয়মানুবর্তিতার সাথে বিশ্ব-জাহান চলতে পারে? এ জ্ঞানগর্ভ ব্যবস্থাটি সম্পর্কে কি কোন বুদ্ধিমান ও চিন্তাশীল ব্যক্তি একথা কল্পনা করতে পারেন যে, এটা একজন খেলোয়াড়ের খেলা ছাড়া আর কিছুই নয় এবং তিনি নিছক নিজের ফূর্তি ও আনন্দ স্পৃহা চরিতার্থ করার জন্য কয়েকটি পুতুল বানিয়ে নিয়েছেন, কিছুক্ষণ খেলা করার পর আবার সেগুলো ভেঙে মাটিতে মিশিয়ে দেবেন? এসব কিছু তোমরা নিজেদের চোখে দেখছো এবং এরপরও নবীর কথা মেনে নিতে অস্বীকার করছো? তোমরা কি দেখতে পাচ্ছো না, পৃথিবী ও আকাশের প্রত্যেকটি জিনিস নবী তোমাদের সামনে যে তাওহীদী মতবাদ পেশ করছেন তার সাক্ষ্য দিচ্ছে? এসব নিদর্শনের উপস্থিতিতে তোমরা বলছো فَلْيَأْتِنَا بِآيَةٍ (এ নবী কোন নিদর্শন নিয়ে আসুক)। নবী তাওহীদের দাওয়াতের পক্ষে সাক্ষ্য দেবার জন্য এ নিদর্শনগুলো কি যথেষ্ট নয়?

৩৬) এখান থেকে আবার ভাষণের মোড় ঘুরে যাচ্ছে নবী ﷺ ও তাঁর বিরোধীদের মধ্যে যে সংঘাত চলছিল সেদিকে।
৩৭) যে সমস্ত হুমকি-ধমকি, বদদোয়া ও হত্যার ষড়যন্ত্রের সাহায্যে সর্বক্ষণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে স্বাগত জানানো হতো এ হচ্ছে তার সংক্ষিপ্ত জবাব। একদিকে ছিল কুরাইশ নেতারা। তারা প্রতিদিন তাঁর এই প্রচার কার্যের জন্য তাঁকে হুমকি দিতে থাকতো এবং তাদের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক বিরোধী আবার বসে বসে যে কোনভাবে তাঁকে খতম করে দেবার কথাও ভাবতো। অন্যদিকে যে গৃহের কোন একজন ইসলাম গ্রহণ করতো সে গৃহের সবাই তার শত্রু হয়ে যেতো। মেয়েরা দাঁতে দাঁত পিশে তাঁকে অভিশাপ দিতো এবং বদদোয়া করতো। আর গৃহের পুরুষরা তাঁকে ভয় দেখাতো। বিশেষ করে হাবশায় হিজরাতের পরে মক্কার ঘরে ঘরে বিলাপ শুরু হয়ে গিয়েছিল। কারণ এমন একটি বাড়ি পাওয়াও কঠিন ছিল যেখান থেকে একজন পুরুষ বা মেয়ে হিজরত করেনি। এরা সবাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নামে অভিযোগ করে বলতো, এ লোকটি আমাদের পরিবার ধ্বংস করে দিয়েছে। এসব কথার জবাব এ আয়াতে দেয়া হয়েছে এবং একই সঙ্গে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও উপদেশ দেয়া হয়েছে যে ওদের কোন পরোয়া না করে তুমি নির্ভয়ে নিজের কাজ করে যাও।
৩৮) অর্থাৎ দুঃখ-আনন্দ, দারিদ্র-ধনাঢ্যতা, জয়-পরাজয়, শক্তিমত্তা-দুর্বলতা, সুস্থতা-রুগ্নতা ইত্যাদি সকল অবস্থায় তোমাদেরকে পরীক্ষা করা হচ্ছে। দেখা হচ্ছে, ভালো অবস্থায় তোমরা অহংকারী, জালেম, আল্লাহ‌ বিস্মৃত ও প্রবৃত্তির দাস হয়ে যাও কিনা। খারাপ অবস্থায় হিম্মত ও সাহস কমে যাওয়ায় নিম্নমানের ও অবমাননাকর পদ্ধতি এবং অবৈধ পন্থা অবলম্বন করে বসো কি না। কাজেই কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তির এ রকমারি অবস্থা বুঝার ব্যাপারে ভুল করা উচিত নয়। সে যে অবস্থারই সম্মুখীন হোক, তাকে অবশ্যই পরীক্ষার এ দিকটি সামনে রাখতে হবে এবং সাফল্যের সাথে একে অতিক্রম করতে হবে। কেবলমাত্র একজন বোকা ও সংকীর্ণমনা লোকই ভাল অবস্থায় ফেরাউনে পরিণত হয় এবং খারাপ অবস্থা দেখা দিলে মাটিতে নাক-খত দিতে থাকে।